একটা শতাব্দী প্রাচীন প্রশ্ন । কেউ বলে ডিম ছাড়া মুরগি কিভাবে আসবে । কেউ বলে মুরগি ছাড়া ডিম কিভাবে আসবে ! দুটোই যৌক্তিক প্রশ্ন । কিন্তু, উত্তর কি দুটো? না । আমরা এই উত্তরটাই আজ খোঁজার চেষ্টা করবো ।
ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করে এমন প্রাণী মুরগির আগেও আরও অনেক আছে । সুতারাং, ডিম আগে এটা বলাই যায় । অর্থাৎ, সঠিক প্রশ্নটা হচ্ছে, মুরগি আগে নাকি মুরগির ডিম আগে । এই ক্ষেত্রে আমাদের বিবর্তনের কার্যপ্রক্রিয়া বোঝা জরুরী ।
বিবর্তনের দিক থেকে বিবেচনা করলে ডিম আগে । কারণ, বিবর্তনের মাধ্যমে একটা প্রাণী থেকে আরেকটা প্রাণীর বিবর্তন হয় তাদের জীনে পরিবর্তনের মাধ্যমে । নিশ্চিতভাবেই মুরগির আদিমাতা (প্রোটো চিকেন) এবং বর্তমান মুরগি এই দুইয়ের মধ্যে আরও হাজারো ছোট ছোট ধাপ আছে যে ধাপগুলাতে অল্প অল্প মিউটেশনের মাধ্যমে তাদের দৈহিক গঠনে পরিবর্তন এসেছে । কোন প্রাণীর(বা উদ্ভিদ) ডিএনএতে মিউটেশনের মাধ্যমে জীবিতাবস্থায়ই তো আর প্রোটো চিকেন থেকে চিকেনে পরিণত হওয়া সম্ভব না । অর্থাৎ, মিউটেশনের যে ধাপে এসে প্রাণীটা মুরগির বৈশিষ্ট্য পেয়েছে, সেটা অবশ্যই প্রথমে ডিমেই এসেছে । এরপর ডিম ফুটে বের হওয়া এবং বড় হওয়ার পর দেখা গেলো সেটা তার বাপ-মা থেকে কিছুটা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নিয়েছে । অর্থাৎ, একটি প্রোটো মেল চিকেন এবং প্রোটো ফিমেল চিকেনের শারীরিক মিলনের ফলে গঠিত ভ্রূণ থেকেই মিউটেশনের মাধ্যমে প্রথম ডিমটা আসছে যেটা থেকে প্রথম মুরগি জন্ম নিয়েছে । যে ডিমের ভেতর “প্রথম মুরগি”র জন্ম এবং বেড়ে উঠা, টেকনিক্যালি সেটাকেইতো প্রথম মুরগির ডিম বলা উচিৎ ।
এমনও একটা যুক্তি আছে যে, “মুরগির ডিমের খোলস তৈরী হওয়ার জন্য ovocleidin (OC-17) প্রোটিন অত্যাবশ্যক। কিন্তু এ প্রোটিন কেবল পাওয়া যায় মুরগির ওভারিতে। সুতারাং মুরগি আগে ।” এখন যদি প্রশ্ন করি, মুরগিতে এই প্রোটিন কিভাবে এলো, এর উত্তর কি? কোন কিছু খাওয়ার সময় মুরগির আদিমাতা (প্রোটো চিকেন) কি এই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়ে জীবিতাবস্থায়ই আদিমাতা থেকে মুরগি হয়ে গেছে? বৈজ্ঞানিকভাবে সেটাতো সম্ভব না । প্রোটিনটা অবশ্যই মুরগির আদিমাতার কাছেও ছিল বা মিউটেশনের মাধ্যমে মুরগির আদিমাতার গর্ভের ডিএনেতে তৈরি হয়ে সেই ডিএনএ যুক্ত ভ্রূণ দিয়েই ডিম গঠিত হইছে এবং পরবর্তীতে মুরগিতে আসছে ।
অনেকে এমনও প্রশ্ন করে যে, প্রথম “মুরগির ডিম” কোনটা? মুরগি যে ডিমে বেড়ে উঠছে সেটা? নাকি “প্রথম মুরগি” যে ডিম পাড়ছে সেটা? মিউটেশন ঘটে মূলত ডিএনএ এর রেপ্লিকেশন এর সময়, আর ডিএনএ এর রেপ্লিকেশন ঘটে শারীরিক মিলনের পর, ভ্রূণ গঠিত হওয়ার আগে এবং নবগঠিত ডিএনএ নিয়েই নতুন ভ্রূণটা তৈরি হয় । সেই ভ্রূণ নিয়ে যে ডিমের ভিতরে মুরগি বেড়ে উঠছে সেটাকেতো মুরগির ডিমই বলার কথা !
আর, সৃষ্টিতাত্ত্বিক দিক থেকে বিবেচনা করলে কোন সন্দেহ ব্যতীতই মুরগি আগে । কারণ, সৃষ্টিতাত্ত্বিক বিবেচনায় গরু, ছাগল, মানুষ, ভেড়া, বলদ সবকিছুই আকাশ থেকে টুপ করে পড়ছে । এরপর বাচ্চা ফুটানো শুরু করছে । প্রথমে মুরগি আসছে এই যুক্তিটা এমন যে, সেই মুরগিটা কোন ডিম থেকে জন্ম হয় নাই, বরং বড় হইতে হইতে মুরগি হয়ে গেছে, যেটা সৃষ্টিতাত্ত্বিকরা বানর থেকে মানুষের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভাবে ।
সহায়ক লিঙ্কঃ
৩) ASAP Science: https://www.youtube.com/watch?v=1a8pI65emDE