“বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক এর নাম বলুন” এই প্রশ্ন করলে সম্ভবত শয়ে নব্বই জনই প্রথমে ইসলামী ব্যাংক এর নাম বলবে । নামের মধ্যেই ধর্মকে ঢুকিয়ে দেয়া এই ব্যাংকও ধর্মকে পুঁজি করে এমনভাবে তাদের জাল বিস্তার করেছে যে, যে কেউ ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই তাদের কথা মাথায় আসে । জামাতের পন্যের প্রতি এলার্জি থাকায় কখনোই আমি নিজের অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনে ইসলামী ব্যাংকে যাইনি । কিন্তু, বন্ধুরাও যখন ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে সাজেশন দিলো, তখন মনে হলো খোঁজ নিয়ে দেখি তারা কি আসলেই ইসলামিক কিনা (৫-৬ বছর আগের কথা) ! খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি, এযে “উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট” ! শুধু নামের মধ্যেই “ইসলামিক” লাগায়ে রাখছে, বাকি সব ভোঁ ভোঁ ! এই খোঁজ নেয়াটা কি খুব কঠিন? না ! বরং খুবই খুবই সহজ, এবং এখনকার অবাদ ইন্টারনেটের যুগে আরও সহজ । কিন্তু ধর্মের নামে অন্ধ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর সেই খোঁজ নেয়ার সময়, ইচ্ছা এবং জানলেও মানার মানসিকতা কোনটাই না থাকার সুযোগ নিয়ে তারাও রীতিমতো মনোপলি খেলে যাচ্ছে এই খাতে ।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো “বাংলাদেশ ব্যাংক” । তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনারত সব ব্যাংক এর তথ্য রয়েছে । বিভিন্ন মেয়াদী অ্যাকাউন্ট এর জন্য কোন ব্যাংক এর সুদের হার কতো, তার বিস্তারিত তথ্য পাবেন সেখানে (সূত্রঃ ১) । মজার ব্যাপার হলো, “সুদমুক্ত” নয়, “সুদযুক্ত” ব্যাংকের সেই তালিকায় ইসলামী ব্যাংকের নামও তালিকাভুক্ত আছে (ছবিঃ ১) ! ব্যাপারখানা কি? এই ট্র্যাডিশনাল ব্যাংক এর লিস্টে তাদের কাজ কি? শুভঙ্করের ফাঁকিটা বুঝতে পারছেন? নাকি বলবেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যই বিশ্বাসযোগ্য না? ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, অতি সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের রাস্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে (সুত্রঃ ২)। সুদবিহীন লেনদেনের গ্যারান্টি যাদের ব্যবসার মূল মার্কেটিং পয়েন্ট, তারা সুদের বিনিময়ে ঋণ নেয়াটা তাদের নিজেদের নীতিরই বরখেলাপ নয় কি?
আরও একটা ব্যাপার লক্ষনীয় । ইসলামী ব্যাংক সব সময়ই দাবী করে যে, তাদের পরিচালনা পর্ষদও সম্পূর্ণ ইসলামিক । কিন্তু, এখানেও ভন্ডামী । ২০১৫ তে জে পি মরগ্যান এর ক্লায়েন্ট ইসলামী ব্যাংক এর ৩ ভাগ শেয়ার কিনে নেয় (সূত্রঃ ৩) । এবং, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ ২ ভাগের বেশি শেয়ারের মালিক হলে তিনি “বোর্ড অফ ডিরেক্টর” এর অংশ হবেন । হিসেবে গড়বড় লেগে গেলো কি?
যারা “জে পি মরগ্যান কে?” বলে মাথা চুলকাচ্ছেন, তাদের জন্য বলি, জে পি মরগ্যান ছিলেন একজন ইহুদি বংশদ্ভুত ব্যাংকিং টাইকুন যাকে আধুনিক ব্যাংকিং এর জনক ধরা হয় । তিনি কেমন ঘাগু পাবলিক ছিলেন সেটা একটা ছোট্ট তথ্য দিলে বুঝা যাবে, ১৮৯৫ এর অর্থনৈতিক ধ্বসের সময় তিনি আমেরিকান সরকারকে ঋণ দিয়েছিলেন যেটা আমেরিকাকে সেই ধ্বস থেকে রক্ষা করে (সূত্রঃ ৪) । না, ভুল পড়েন নাই ! আমেরিকা উনাকে না, উনিই আমেরিকাকে ঋণ দিয়েছিলেন । সেই সময় “রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক” এর ধারণাটা ছিল না । এহেন রাম ধরা খাওয়ার পরেই “ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক” গঠিত হয়েছিল যেন যেকোনো আর্থিক জটিলতায় দেশের সরকারকে, বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য বা নিশ্চয়তা প্রদান করা যায়।
আইনগত জটিলতায় অনেক হারামকেও হালাল বানিয়ে ফেলা যায় । তাই দ্বিতীয় পয়েন্টটাকে গোনার বাইরেই ধরলাম । কিন্তু, প্রথম তথ্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা কি আসলেই ইসলামিক ব্যাংকিং চালাচ্ছে? নাকি শুধু “ইসলামিক” নামটা ব্যবহার করে মানুষের অনুভূতিতে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা করছে !
কি? এরপরও কি “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড” নামটা শুনেই আবেগে ভেসে যাবেন? সিদ্ধান্ত আপনার।
প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ১৫, ২০১৭। আপডেটঃ জানুয়ারী ৩১, ২০২৪
তথ্যসূত্রঃ
১) https://www.bb.org.bd/en/index.php/financialactivity/interestdeposit
২) https://bangla.thedailystar.net/economy/bank/news-555711
৩) http://www.thedailystar.net/business/jp-morgan-clients-buy-islami-bank-176446
৪) https://www.jpmorgan.com/country/BD/en/jpmorgan/about/history/month/feb